হাসু আপা | প্রিয়তা | শিমুল মুস্তাফা | মুহাম্মাদ ইমরান

0 Votes

জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে, বায়েজিদের কাছে লিখা হাসু আপার ব্যথার কাজলে মাখা একটি চিঠি ।

প্রিয় বায়েজিদ

সংসার নামক এক অদ্ভুত ধর্ম পালন করিতেছি প্রায় বছর সাতেক তবে সত্য কথাটা হইলো এখনো আমি তোমার বাহিরে তেমন কিছুই ভাবিতে পারি না । জানি এটা অন্যায় তারপরও এটাই আমার কাছে ন্যায় । কোনোরকম কারণ ছাড়াই মানুষ বড় বেশি স্বার্থপর । মানুষ সবচাইতে ভালোবাসে তার নিজেকে আর আমার নিজ বলিতে কিছুই নাই । তোমার আর আমার মাঝে ফাঁক খোঁজাটা মৃত্যুর পরেও আমার দ্বারা সম্ভব নহে, সেই সুখানুভুতির মায়াবী ছলনাটুকু বেশ ভালোভাবে আঁকড়াইয়া ধরিয়া আছি যাহার কারণে এখনো আমি দিব্যি বাঁচিয়া রহিয়াছি ।

তুমি জানো কি না জানি না, ইতিমধ্যে আমার একটা বাচ্চা হইয়াছে । আমার স্বামীটাও বেশ । মনে হয় অনেকের চাইতেই ভালো আছি তারপরও নিজেকে কেমন যেন রোবটের মতো লাগে। মনে হয় যান্ত্রিক এই সভ্যতায় আমি নিজেও পুরোদস্তুর যন্ত্র হইয়া গিয়াছি। খুব সকালে ঘুম হইতে উঠিতে হয়। বাচ্চাটাকে স্কুলে লইয়া যাই অতঃপর ক্লাস শেষ না হওয়া পর্যন্ত স্কুলের করিডরে বসিয়া থাকি। যদিও আমি একা নই, আমরা সব মা’ই বসিয়া থাকি, আশ্চর্যজনক বিষয়টা হইলো, প্রত্যেকটা মহিলাই শুধু নিজেদের কথাই বক বক করিয়া বলিতে থাকে, কারো কথা কারো শোনার বিন্দুমাত্র সময় নাই।

আমার স্বামী বেশ রাত করিয়া বাড়ি ফিরে । আমরা একই ছাদের নিচে থাকিলেও ভাবখানা এমন যেন কেউ কাউকে চিনে না । যদিও এর জন্য আমিই ঢের দায়ী। আমরা যে যার মতো ব্যস্ত । রুটিনমাফিক এই জীবনে আমি ক্লান্ত এক পথিক, আপাতত খেই হারাইয়া ফেলিয়াছি । দিন যাচ্ছে আর আমিত্বর’ কাছে ক্রমশ হারাইয়া যাইতেছি । তোমার প্রতি তেমন কোনো অনুযোগ আমার নাই, তোমাকে আমি যখন বলিয়াছিলাম, বাবা আমার জন্য ছেলে খুঁজিতেছে, তাড়াতাড়ি কিছু একটা করো, তোমাকে না পাইলে আমার বাঁচিয়া থাকা মুশকিল হইবে, সেই সময়টায় রাজ্যের সব অসহায়ত্ব কেন তোমাকে গ্রাস করিয়াছিল তাহা বোধ করি আজ অবধি আমার অজানা।

মাঝে মাঝে তুমি এমন করিতে যেন তোমার রক্তের মধ্যে আমার নিঃশ্বাসের ফোয়ারা বহিতেছে । তুমি কী সেইটা সত্যি সত্যি করিতে নাকি অভিনয় করিতে তাহা আমি জানি না । আমি আমার আবেগ তোমার মতোন করিয়া প্রকাশ করিতে পারিতাম না, এর একটা কারণ আমি নারী আর একটা বোধ হয়–তোমার প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি যার প্রলয়ঙ্করী প্রভাব আমাকে নির্বাক, নিথর, নিস্তব্ধ করিয়া দিয়াছিল।

এখনো তোমার অনেক স্মৃতি আমাকে আহ্লাদিত করিয়া চলিয়াছে । প্রায় প্রত্যেকটা রাতেই তুমি আমার চোখের নোনাজলে হারাইয়া যাও । আমি সব জানি, তুমি ভালো মানুষ নও । আমি জানি, আমার স্বামী প্রতারণার ফাঁদে আটকা পড়িয়াছে । তুমি আমার দুর্বলতাকে উপহাস করিও না। মোটেও ভাবিওনা আমি পাগল হইয়া গিয়াছি । আমি নিজেকে অনেক ভালোবাসি তাই তোমাকে ভালোবাসি এবং বাসবো ।

ইতি-

তোমার হাসু

ছড়িয়ে দিন ইচ্ছেমত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *