আমি কোনো সংবিধান মানি না | মুহাম্মাদ ইমরানের কবিতা | Ami Kono Sonhbidhan Mani na | Muhammad Imran |

আমার কাছে পৃথিবীর
কোনো মানে নেই।
আমার কাছে জীবনের
আলাদা কোনো ভাষা নেই ।
স্বাদ নেই, স্বস্তি নেই, শাস্তি নেই,
শ্রান্তি নেই, তিক্ততা নেই,
ক্লেদ নেই, নেই কোনো প্রাপ্তি ।
সমস্ত নতি স্বীকারের মধ্যে এখনো
আমি তোমাকেই খুঁজি
পৃথিবীর মানে বলতে এখনো
আমি তোমাকেই বুঝি ।

আমি কোনো সংবিধান মানি না।
আমি প্রেসিডেন্ট মানি না
আমি কোনো প্রধানমন্ত্রী মানি না
মন্ত্রীমশাইদের একের পর এক
বিরল প্রজাতির আশ্বাস মানি না।
সেনাবাহিনীর তাণ্ডব অথবা
অভিবাদনের নামে ফুলেল শুভেচ্ছা,
ভয়ার্ত চিৎকারে গার্ড অব অনার
বিলকুল তাড়িত করেনা আমায় ।

রাষ্ট্রযন্ত্র বিকল করে ক্ষমতায়
বসে থাকার পশুবৃত্তি’ মানি না আমি ।
মানি না ৫৪ ধারা, পুলিশি নির্যাতন ।
শক্ত বিধান এবং শক্তিশালী মানুষ
সব মূল্যহীন, কিছুই মানি না আমি।

আমি সংসদ মানি না, সাংসদ মানি না,
ন্যায়-নীতি, নিষ্ঠা, বিনয়াবনতা, সততার
চার পয়সার দাম নেই আমার কাছে ।
তোমার মূল্যেই কেবল ওরা আমার কাছে
মূল্যবান অথবা মূল্যহীন, প্রিয়তমা ।
,
ধুরন্ধর গোধূলির স্পষ্ট অস্পষ্টতা
আমার গতরে জ্বালা ধরাতে পারে না ।
হলুদ নদীর আদৌ সাহস নেই
আমাকে চুম্বনের, আমাকে ছোঁয়ার ।
বাঁচা-মরার ধুন্ধুমার কোনো
ভিন্নতা নেই আমার কাছে ।
আলো-আঁধারের ব্যবধান কোথায়
আমি বুঝি না, জানি না ।

আমি স্বপ্ন দেখি না, দেখতে পারি না।
তুমিহীন সব স্বপ্নই আমার কাছে
মিথ্যাচার, দুঃস্বপ্ন, স্বপ্নবিলাস,
প্রলয়ঙ্কারি পাপাচার, ব্যভিচার ।

রীতিনীতি, কাল-মহাকাল,
আদিম যুগ, স্বর্ণ যুগ, কলি যুগের
সাধ্য নেই আমাকে পরাভূত করার;
আমার সাথে সখ্যতা গড়ে তোলার ।

আমি সুখ নামের বহুমাত্রিক অসুখকে
বুট দিয়ে পিষ্ট করে লাথি মেরে
ভারত মহাসাগরে ফেলে দেই ।
আমি অশ্রুর সফেনকে বুড়ো আঙুল
দেখিয়ে সারারাত অব্দি তোমার
ফিরে আসার প্রহর গুনতে থাকি ।
আমার ধুম্রজালে ভরা খেয়ালকে
বারংবার শুশ্রূষা করি, কেবল
তোমার জন্য, সুহাসিনী রাজকন্যা ।

অনন্যোপায় এই ধরায় কোনোদিনই
ফুটবে না হয়ত আশার বকুল ।
তবুও সকল অনুবিধি, অনুমত
অনুদঘাত, অনুপপত্তি আমার কাছে
নির্ভেজাল, বেমালুম উপেক্ষিত ।

যাপিত সমাজ ব্যবস্থা, যুতসই শাস্ত্রসকল
এবং মনুষ্যরচিত সংবিধানে
তুমি বিচার্য নও লক্ষ্মীসোনা !
প্রিয়তমা, আহ্লাদী ময়না,
তোমাকে সালাম, সালাম নিরন্তর ।


১৮ 0৯ ১৬

মা কেন এমন ? মুহাম্মাদ ইমরানের কবিতা | Ma keno Emon | Muhammad Imran |

কী-রে একি তামাশা আজব
জ্বর হয় আমার
চেয়ে দেখি
আমার চেয়ে বেশি জ্বর মার ।
ঘুম নেই মার চোখে
একটু পরপরই তার
বাজানের মাথায় হাত রেখে
কী যেন কী দেখে ?

পরীক্ষায় ফাস্ট হলাম আমি
খেলায়ও জিতলাম আমি
অথচ ফাস্ট হলো মা
কই জিতলাম আমি
জিতলও যেন মা ।

মেলে না উত্তর
ভাবি বসে নিরালা
চারপাশে চালাকদের বুদ্ধি ফাঁদা
দিগন্ত জুড়ে মানুষ-বেশে
জানোয়ারের গাঁদা ।
এত ছ্যাঁচড়ের ভিড়ে
কোন সে কারিগর
এমন মা দিলো পরান ভরে ।

ওহ্‌ পেয়েছি পেয়েছি’
মা-তো আলাদা কিছু নয়
অভিন্ন আত্মা, একই সত্তা
নাড়িটাও যে ছিলো এক
কোথা থেকে ধাত্রীবেটি এসে
দিয়ে গেলো করে ফারাক ।

বসে খাবার টেবিলে
মুরগির রান আর
মাছের মাথা খাই সমানতালে;
মার হাসিতে বিরল মুগ্ধতা
মাথা খাই আমি, মা খাচ্ছে মমতা ।

যদি বলি
রুই মাছের মাথাটা
আজকে কী খাওয়া যায় না, মা ?
মার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে
ভাবটা এমন, সে খেলে
পৃথিবী ধ্বংসও হতে পারে ।
খেয়েছি, পরে খাব, আর একদিন খাব
অথবা এমন কথা বলে না বাপ;
সারাবছর সব মার-ই একই উত্তর ।
এভাবেই চলছে জনম দুঃখিনীর আয়ুষ্কাল
এভাবেই চলছে মা-দের দিনকাল ।

চুপটি মেরে ভাবি বসে একেলা
মা কেন এমন ?
এমন স্বার্থ উদ্ধারের মিছিলে
এই ভদ্র মহিলাকে
কে পাঠালো, এই চির অভাগার তরে ?


২৫ ৬ ১৮