চার দেয়ালের নীল | মুহাম্মাদ ইমরান | কালোত্তীর্ণ চিরকুট |

সর্বান্তকরণ আবেগের মাঝেই অবুঝ প্রেমের বসবাস , আবেগকে প্রশমিত করে ভালোবাসার ঝাণ্ডা তুলে ধরা মোটেও সহজসাধ্য নয় ,  ভালোবাসার অনন্যসাধারণ বোধসমূহের যথার্থ মূল্যায়ন করেই যে  বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়ানো যায়- তারই যথার্থতার প্রকাশ – জেলখানার কয়েদি মেহেদী হাসান নীলের কাছে লিখা – ইসরাত জাহান আশার একখানা জীবনবাদী পত্র ।

নীল

দুর্নিবার কোন আকর্ষণ- আমার স্বাভাবিকতায় অথবা স্বপ্নিল আরাধনায় হানা দিতে পেরেছে কি না- মনে পড়ে না , অঝরে কারো জন্য একাকী কেঁদেছি নাকি – তাও বলা মুশকিল । কারো প্রতি অতিশয় আসক্তির চেতনা আমাকে কখনো শাসন করতে পেরেছে কি না তাও বোধ করি আমিই জানি না । সোজা কোথায় তোমার প্রতি সামান্যতম আনুগত্য কোন কালেই আমার ছিল না তবে আমাকে পাওয়ার জন্য তোমার অমানুষিক পরিশ্রম- আমার হৃদয় গহীনে যে একেবারে দাগ কাটেনি তাও বলা যাবে না ।

কিন্তু সেই হাড়ভাঙ্গা শ্রমের বিনিময়ে তুমি আমার কাছ থেকে যা নিয়েছ তাকে আর যাই হোক ভালোবাসা বলা যাবে না- একজন নাছোড়বান্দা ভিখারি কে ভিক্ষা দেওয়া অথবা শ্রমের বিপরীতে পারিশ্রমিকের নামে  করুণাদেওয়া’  বলাই ঢের শ্রেয়। খুব ছোটবেলা থেকেই আমি নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করি , নিয়মের দেওয়ালগুলো কখনোই আমার কাছে অনিয়ম হতে পারেনি । আমি যখন মায়ের সাথে শিল্পকলায় গান শিখতে যেতাম, তুমি বিনা কারণেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমাকে এক নজর দেখার জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে , বিশ্বাস করো একটি দিনও আমি ভাবিনি ওই মানুষটা কেন আমার জন্য দাঁড়িয়ে থাকে ?

আমাদের বাড়ির সামনের আম গাছটায় তাবিজ ঝুলানো দেখতাম , ওই দেখা পর্যন্তই , আমি বুঝতাম কিন্তু তাবিজ’ কে রেখেছে তা নিয়ে কোনো বিশেষ ঝোঁক আমার হৃদয়ের চিলেকোঠায় পরিলক্ষিত হয়নি । নারকেল গাছ বেয়ে তুমি রাত- বিরাতে আমাদের চালের উপর বসে থাকতে- শুধু আমাকে এক নজর দেখার জন্য ,চালের উপর ঘুমিয়ে থাকার জন্য একদিন আমাদের বাড়ীর লোকজন তোমাকে অনেক মারধর করল, পরে জানা গেলো অনেকগুলো ঘুমের বড়ি খাওয়ার জন্য তুমি আনমনে চালের উপরই তন্দ্রার ঘোরে হারিয়ে গিয়েছিলে, বেধড়ক পেটানোর জন্য তোমার বাম হাতটা ভেঙ্গে গিয়েছিল এবং তুমি সেই ভাঙ্গা হাতের ব্যান্ডেজ পরিহিত অবস্থায় আমার সামনে দিয়ে ঘুরঘুর করতে – উদ্দেশ্যটা পরিষ্কার কিন্তু আমি আরও বিরক্ত , ওই মুহূর্তে করুণা তো দূরের কাব্য – এক ফালি ঘৃণিত বোধের সঞ্চারণও তুমি করতে পারোনি  ।

আমার সুশৃঙ্খল জীবনটা অতিষ্ঠ করে দিয়েছিলে তুমি । কলেজের সামনে একদিন আমাকে তুমি কি যেন কী বলতে চাইলে, আমি দৌড়ের মত করে হাঁটতে শুরু করলাম , আমার মা অনেক বন্ধুদের সামনে তোমার গালে কসে থাপ্পড় মারল , তোমার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছিল , তুমি কোনো  কথা বলোনি তবে তোমার অশ্রুর অন্তর্যামী ভাষা বুঝে নিতে আমার দেরি হয়নি ।এই প্রথম তোমার বিষয়টা আমাকে খানিকটা স্পর্শ করল , তোমার আবেগ, পুঞ্জিভূত কিছু অভিমান এবং অভিযোগের অশ্রু আমাকে বিচলিত করতে সক্ষম হলো , তবে তোমার সেই বাধভাঙ্গা চোখের জল- আমার করুণার দেওয়াল টপকাতে পারেনি ।

এভাবেই চলছিল আমাদের দিনকাল , ইতিমধ্যে তুমি বেশ কয়েকবার মেট্রিক পরীক্ষায় ফেল করলে আর আমি গোল্ডেন এ প্লাস সহ ইন্টারমিডিয়েট শেষ করলাম সুতারং দিন কে দিন পরিস্থিতি তোমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে লাগল । কলেজেপড়া অবস্থায় মাসুদ রানা নামক একটা বাবুগোছের ছেলের সাথে আমার যৎসামান্য সম্পর্ক হয়েছিল , সত্যি কথা বলতে কী এই সম্পর্কের ব্যাপারটায় মাসুদের তেমন কোন ভূমিকা ছিল না উপরন্তু আমিই তাঁকে অনেকটা জোরপূর্বক রাজি করিয়েছি , আমি জানি তুমি কষ্ট পাচ্ছ , না নীল- কষ্ট পাওয়ার তেমন কিছু নেই , এটাই ঢের বাস্তবতা এবং ধ্রুব সত্য ।

মানুষ তাঁর নিজের ইচ্ছাতে প্রেমে পড়তে পারে না , এটা আনমনে ,বেখেয়ালে অথবা হেয়ালির ছলে একাকী হয়ে যায় , সমস্ত নিয়মের বলয় ভেঙ্গে অপরিপক্ক বোধসমূহের ছোট ছোট কিছু ভুলের মাঝেই এই প্রেমের বসবাস, এটি হতে পারে একটা মানুষের সর্বোত্তম আবেগের এবং সর্বান্তকরণ ক্ষমার অদ্ভুত এক বহিঃপ্রকাশ । প্রেম কেমনে হয় , কে করায় , কে মধ্যস্থতা করে , কে এর লাটাই ঘুরায় তা জানার সময় কই বরং তাঁর মধ্যে বুঁদ হয়ে থাকার প্রশান্তি নিয়েই মানুষ বেঁচে থাকতে পারে অনাদিকাল অথবা মরে যেতেও যেন তাঁর কোনো  বাঁধা নেই ।

খুব সহজ করে বলতে গেলে, আমাকে তোমার কেন ভালো লেগেছে তা যেমন তুমি জানো না , ঠিক মাসুদ রানাকে ভালো লাগার কোন যৌক্তিক কারণ আমার কাছে আপাতত নেই , তবে মাসুদের প্রতি আমার দুর্বলতার প্রকাশ একেবারেই সামান্য , সে মোটেও আমার চিন্তার ধারাপাতে কোনো  প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি , তাকে আমার ভালো লাগত , কেবল এতটুকুই । যখন শুনলাম মাসুদ বিবাহিত – আমার মনটা একটু খারাপ হলো কিন্তু আমি তাকে প্রতারক ভাবিনি কারণ দোষটা আমারই । আমার সাথে স্পষ্ট করে তুমি কথা বলতে পারতে না , তোতলাতে আর যা বলতে তাকি ফ্রেঞ্চ নাকি হিব্রু তা নিয়ে আমি সন্দিহান থাকতাম অথচ আমি শুনেছি তুমি নাকি চমৎকার গান করো এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নান্দনিক উপস্থাপনা করো।

সেই তুমি বেশ সাবলীলভাবে একদিন আমাকে ফোন করে জানিয়ে দিলে তুমি আমাকে নিয়ে পালিয়ে যেতে চাও , আমি তোমাকে মোটেও ভালবাসতাম না এটা সত্য কিন্তু বিশ্বাস করো আমি বোধ হয় তোমার ওই প্রস্তাবটার জন্যই বসে ছিলাম কারণ আমি এটা বুঝতাম, আমার তাকেই বিয়ে করা উচিৎ যে আমাকে ভালোবাসে । যাই হোক, আমি বীরাঙ্গনা বেশে তোমার হাত ধরে পালিয়ে গেলাম , আমরা বোধ হয় এক মাস একসাথে ছিলাম , তুমি আমাকে অনেক ভালোবাসো- সন্দেহাতীতভাবে তা প্রমাণিত।

কিন্তু ভালোবাসাই যে সর্বশেষ কথা নয় এবং এটি আবেগের চাদরে মোড়ানো কয়েকটি বর্ণ মাত্র , এই প্রথম শরীর এবং হৃদয়ের দামে আমি তা বুঝে নিলাম । একটি টাকাও তোমার কাছে নেই ,ভরসা কেবল চুরি করে আনা আমার মায়ের গহনা সকল । তোমার সাথে আমার কিছুই মিলছে না , আমি পরিপাটি , মার্জিত বোধের দাস আর তুমি অগোছালো , নোংরা, মাদকাসক্ত, গালি ছাড়া কথা বলতে পারো না – কেমন যেন বস্তির উদ্বাস্তু জীবনের চিত্র তোমার মধ্যে বহমান , আমি বড় বিপদে পড়ে গেলাম ।

ইতিমধ্যে আমার বাবা- মা’ পাগলের মতো  আমাকে খুঁজে- ফিরছে , তোমার নামে গোটা দশেক মামলা রুজু করা হলো  , আমার বাবা অনেক প্রভাবশালী এবং শিল্পপতি হওয়ায় তুমি খুব ভয় পেতে , পুলিশ তোমাকে ধরে নিয়ে গেলো  এবং তারপর থেকে তুমি এখন অবধি জেলেই আছ  । তোমার হতদরিদ্র বাবা- মার সাথে আমার কথা হয় , তারা তোমার জামিন করানোর জন্য আমার কাছে অনেকবার এসেছে ,আমি ও বিরামহীন চেষ্টা করে যাচ্ছি কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছেনা । আমার বাবা – মার সাথে এখন আমার কোন সম্পর্ক নেই , প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করছি , উপরের ঠিকানায় আছি ।

না, আমি তোমার কাছে আর ফিরে যাব না এবং আমি তোমাকে একতরফাও দিয়ে দিয়েছি । নীল- শুধু ভালবাসা আর আবেগের মূর্ছনা দিয়ে সংসারের বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়াটা কঠিন , তবে তুমি আমার জন্য সারাজীবন যে অমানুষিক নির্যাতনের স্বীকার হয়েছ তা ভেবে আমি কষ্ট পাই । কি না করেছ  তুমি আমার জন্য ? আমি তোমাকে ভালবাসতে পারিনি সত্য কিন্তু তারপরও তোমাকে আমার লক্ষ্মী, সোনা, মানিক বলতে ইচ্ছা করছে, তোমার এতিম, অবুঝ ভালবাসাকে প্রণাম না জানালে যে – ভালবাসাকেই অপমান করা হবে । আমি বাস্তববাদী তবে ভুলের ঊর্ধ্বের কেউ নয় , আশা করি আমাকে ক্ষমা করবে , নিঃশর্ত ক্ষমা !

তোমার আশা


মুহাম্মাদ ইমরান

২৩ ০১ ১৬

ছড়িয়ে দিন ইচ্ছেমত

প্রিয়তায় শারমিন || মুহাম্মাদ ইমরানের কবিতা || চোখ বন্ধ করে শুনতে পারেন || Poet: Muhammad Imran ||

সুরাইয়া জাহান শারমিনের আত্মহননের মধ্য দিয়ে জয় হয়েছিল ভালোবাসার, হার মেনেছিল সমস্ত জাতের’ অনতিক্রম্য বিভেদ সকল। জীবনের অসহায় বাস্তবতার কাছে প্রিয়তার পরাজয়, জীবনের পরাজয়, তাঁরই নীলাভ  রক্তিম বহিঃপ্রকাশ–অখিল চন্দ্র দাসের কাছে লিখা, শ্রীকান্ত বাবুর একখানা পত্র ।

প্রিয় অখিল

আমার আশীর্বাদ নিও । দীর্ঘদিন তোমার সমাচার নেওয়া হয় না বলে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি । আমার উপর আত্মিক অভিমান পুষে রেখো না । তুমি শুধু আমার বাল্যবন্ধুই না, তুমি আমার চোখের নোনা জলের অশরীরী আবেগ প্রকাশ করার একমাত্র মাধ্যম, তুমি আমার অপরিপক্ক অনুভূতির অলিখিত আশ্রয় কেন্দ্র । লিখিত বলতে পারলাম না কেবল শারমিনের জন্য। শারমিনের প্রিয়তার কতটা দাস আমি তা কেবল তুমিই জানো, সেইজন্য শারমিনের মতোই  আমি তোমাকে নিজের মনে করি ।

আমি ক্যালিফোর্নিয়াতে আছি প্রায় ১২ বছর অথচ একটি দিনও মনে হয়নি, আমি আমার আমিত্ববোধ থেকে দূরে আছি, আমিত্ববোধ বলতে আমি কাকে ইঙ্গিত করেছি তা তুমি ভালো করেই জানো যদিও সেই বোধের যৎসামান্য একটা অংশ তুমিও বৈকি । আচ্ছা অখিল, জাত’ শব্দটার মানেটা আসলে কী ? জাতিগত বিভেদ, সাম্প্রদায়িক বৈষম্য অথবা বিভিন্ন জাতের বিভেদ,  বৈষম্য দ্বারা লালিত হয়ে বেঁচে থাকার বস্তুনিষ্ঠ সংজ্ঞা আসলে কী, আমাকে তুমি একটু বুঝিয়ে বলতে পারো ?

বন্ধু তুমিই বলো, জাতই’ যদি সবকিছুর নির্ণায়ক হয়ে থাকে তবে মানুষ’ শব্দটার কী প্রয়োজন ছিল ? আমি হিন্দুর ছেলে হওয়ার কারণে শারমিনের বাবা আমাদের বিয়েতে রাজি হল না আর শারমিনের বাবারই বা কিসের দোষ ? আমার বাবা অমিত গঙ্গোপাধ্যায়, আমাকে বলে দিলো, আমরা ব্রাহ্মণ-সুতারং আমাদের যা তা করলে চলবে না, আমরা নাকি সকল দেবতার দ্বারা অভিশপ্ত হব এবং এও বলল মুসলমানের মেয়েকে যদি তুমি বিয়ে করো তাহলে সেই বিয়ের দিনই তুমি আমার মুখে আগুন দিও ।  আর আমার মা’ তো পারলে প্রতিদিনই শীতলক্ষ্যায় ডুবে মরে ।

মাঝে মাঝে চোখের জলকে’ প্রশ্ন করতাম, এই নিষ্ঠুর বোধের জগতে এত মানবী থাকতে শারমিনের দাস কেন হলাম ? চোখের ভারী নোনা জল আমাকে জানিয়ে দিত–প্রেমের অদৃশ্য  বোধকে আমি যদি নিয়ন্ত্রণ করতে পারতাম তাহলে কখনোই আমি তোমায় শারমিনকে দেখাতাম না । বন্ধু আমার, তুমি জানো কীনা জানি না, আমি গোপনে মুসলমান হতে চেয়েছিলাম কিন্তু কিভাবে যেন বাবা টের পেয়ে গেলেন এবং সত্যি সত্যি তিনি ইঁদুর মারার বিষ খেলেন কিন্তু না,  আমার পিতা অমিত গঙ্গোপাধ্যায় মরেননি, তিনি তাঁর ঈশ্বরপ্রদত্ত পাওয়া জাত’ এবং জাতের গরিমা নিয়ে এখনো দিব্যি বেঁচে আছেন ।


জাত জাত’ করে যাদের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিল, তারা সবাই বেঁচে আছে শুধু আমার শারমিন ! বন্ধু, আমার কলম আর চলছে না, কালির বদলে চোখের জল দিয়ে যদি চিঠি লেখা যেত,

বোধ করি তা করতে আমার তেমন কোন অসুবিধা হত না । আমার শারমিন, আমার জন্য বিষ খেয়ে মরে গেলো অথচ আমি কত সুন্দর বেঁচে আছি ! আবার মাঝে মাঝে আমি স্বপ্নও দেখি, কী ভয়ঙ্কর দানব আমি, কতটা অমানুষ হলে এমনটা করা যায়, একবারো কী  ভেবে দেখেছ  ?

অখিল তোমার খবর কী ?  বৌদি, তোমার সন্তানেরা কেমন আছে, প্রকাশ আর নিখিলের কী অবস্থা, তোমরা কী তিন ভাই একসাথেই আছ নাকি পশ্চিমাদের মতো স্বতন্ত্র বোধ’ তোমাদের পেয়ে বসেছে ?


বন্ধু, বন্ধু আমার, জগতে যত মানুষ দেখো–তাদের প্রত্যেকেরই স্বীয় একটা ভুবন আছে, আলাদা একটা চেতনার জটলা আছে, নিজস্ব একটা খোলা আদালত আছে এবং সেই আদালতের বিচারক সে নিজেই ।  আশ্চর্যজনক বিষয়টা হলো,  সেই আদালতের সব রায় তাঁর পক্ষেই যায়, ভাবখানা এমন, সে যেন ফেরেশতা সমতুল্য অথবা ভুলের ঊর্ধ্বের একজন । ডাকাত যখন ডাকাতি করে তার সত্তায় একটিবারের জন্যও অপরাধের বোধ বাসা বাধে না, অপরাধকে অপরাধ মনে করে সম্পাদন করা মোটেও কোনো  সহজ কাজ নয়, অখিল ।

কারো প্রতি আমার কোন অভিযোগ বা অনুযোগ নেই ।  আমার বাবা-মা হয়ত এখনো জানে, তারা ঠিক কাজটিই করেছে আবার আমার বোধই যে সঠিক তাও বলা যাবে না । হয়ত বিধাতা আমাদের অন্তর্যামী কল্যাণের কথা ভেবেই এমন জটিল সমীকরণগুলো তাঁর স্বীয় নিয়ন্ত্রণে রেখে দিয়েছেন ।

অখিল, মা’ নামক আমার দেশটার খবর কী ? সেই ৭১ এর দিনগুলো কী আজো তোমাকে অবিরাম তাড়িয়ে বেড়ায় ? যুদ্ধকালীন ০৯ মাস আমরা এক বিছানায় ঘুমিয়েছিলাম, পাকিস্তানি দানবদের কী  ভয়ঙ্কর অত্যাচার, কে কোন জাতের’ তা তারা বিচার করত লুঙ্গি-পায়জামা খোলার ধৃষ্টতা দেখিয়ে এবং সেই অনুসারে শাস্তি নির্ধারণ করত, কতটা পাষণ্ড হলে এমনটা করা যায় !!

যুদ্ধরত অবস্থায় রাজাকার বাহিনী আমার বড় দিদিকে আমাদের বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে পাকিস্তানি ক্যাম্পে তুলে দিলো । আমার সেই দিদিটা বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে তা আমি আজও জানি না ।  যে রাজাকারের বাহিনী আমার দিদিকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল– বেশ কয়েক বছর পূর্বে তাকে ক্যালিফোর্নিয়াতে একটা অনুষ্ঠানে দেখেছিলাম, আমদের দেশের দামাল ছেলেরা,  যাদের জন্ম মুক্তিযুদ্ধের অনেক পরে, দেখলাম সেই রাজাকারকে তারা পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে বীর মুক্তিযোদ্ধা বলে ।  ওইখানে অনেক পুলিশ থাকায় আমার করার তেমন কিছুই ছিল না; বিড়বিড় করে হয়ত কারো কাছে আমি অভিশাপ দিয়েছি মাত্র।

বন্ধু , যতটুকু পারো মুক্তিযুদ্ধের সত্যিকারের বোধ ও ইতিহাস কিছু উঠন্ত দামালের সঙ্গে ভাগাভাগি করে যেও ।  যে বোধের দায়বদ্ধতায়  আমরা যুদ্ধ করেছি, সেই বোধসমূহ কে কাঁচা-নবীনের মাঝে বিলিয়ে দেওয়া যে আমাদের আর একটা যুদ্ধ, আর একটা পবিত্র দায়িত্ব ।

অখিল, তুমি তো জানো, শারমিনের সাথে আমার তুঁই-তুঁই সম্পর্ক ছিল । ও সারাদিন আমাকে নিয়েই ব্যতিব্যস্ত থাকত ।  আমার সব, আমার সব কিছু ও’ নিয়ন্ত্রণ করত। আমার নাওয়া- খাওয়া, ঘুম, কোন জামার সাথে কোন প্যান্ট, কোন স্যান্ডেল, কোন জুতো–সব ও দেখভাল করত।  ও যদি পারত–ওর কবরের মাঝখানে আমাকেও রেখে দিত কিন্তু আমার মতো হায়না দিয়ে কী আর সেই কাজ করানো সম্ভব?

মাঝে মাঝেই, ও আমাকে বলত, আমি না থাকলে তুঁই বুঝবি ! শারমিন, আমার শারমিন, তুঁই তোঁর জীবন দিয়ে তোঁর না থাকার মানেটা আমাকে বুঝিয়ে গেলি । লিখতে পারলে আরো দুচারটা লাইন আমি লিখতাম, বন্ধু কিন্তু চোখের জল শুকিয়ে যাওয়ার কারণে আর আমি পারছি না ভাই , নশ্বর এই রঙ্গমঞ্চে যতটা ভালো থাকা যায় তুমি ততটাই ভালো থেকো ।

তোমার শ্রীকান্ত

ছড়িয়ে দিন ইচ্ছেমত

আমি কোনো সংবিধান মানি না || মুহাম্মাদ ইমরানের কবিতা || চোখ বন্ধ করে শুনতে পারেন || Poet: Muhammad Imran ||

আমার কাছে পৃথিবীর
কোনো মানে নেই,
আমার কাছে জীবনের
আলাদা কোনো ভাষা নেই ।
স্বাদ নেই ,স্বস্তি নেই , শাস্তি নেই ,
শ্রান্তি নেই , তিক্ততা নেই ,
ক্লেদ নেই , নেই কোনো প্রাপ্তি ।
সমস্ত নতি স্বীকারের মধ্যে এখনো
আমি তোমাকেই খুঁজি,
পৃথিবীর মানে বলতে এখনো
আমি তোমাকেই বুঝি ।

আমি কোনো সংবিধান মানি না,
আমি প্রেসিডেন্ট মানি না ,
আমি কোনো প্রধানমন্ত্রী মানি না ,
মন্ত্রীমশাইদের একের পর এক
বিরল প্রজাতির আশ্বাস মানি না।
সেনাবাহিনীর তাণ্ডব অথবা
অভিবাদনের নামে ফুলেল শুভেচ্ছা,
ভয়ার্ত চিৎকারে গার্ড অব অনার-
বিলকুল তাড়িত করেনা আমায় ।

রাষ্ট্রযন্ত্র বিকল করে ক্ষমতায়
বসে থাকার পশুবৃত্তি, মানি না আমি ।
মানি না ৫৪ ধারা , পুলিশি নির্যাতন ।
শক্ত বিধান এবং শক্তিশালী মানুষ –
সব মূল্যহীন , কিছুই মানি না আমি।
আমি সংসদ মানি না , সাংসদ মানি না,
ন্যায়-নীতি ,নিষ্ঠা, বিনয়াবনতা , সততার
চার পয়সার দাম নেই আমার কাছে ,
তোমার মূল্যেই কেবল ওরা আমার কাছে
মূল্যবান অথবা মূল্যহীন, প্রিয়তমা ।
,
ধুরন্ধর গোধূলির স্পষ্ট অস্পষ্টতা
আমার গতরে জ্বালা ধরাতে পারে না ।
হলুদ নদীর আদৌ সাহস নেই
আমাকে চুম্বনের,আমাকে ছোঁয়ার ।
বাঁচা – মরার ধুন্ধুমার কোনো
ভিন্নতা নেই আমার কাছে ।
আলো -আঁধারের ব্যবধান
কোথায় ,আমি বুঝি না , জানি না ।
আমি স্বপ্ন দেখি না, দেখতে পারি না।
তুমিহীন সব স্বপ্নই আমার কাছে
মিথ্যাচার , দুঃস্বপ্ন, সপ্নবিলাস,
প্রলয়ঙ্কারি পাপাচার , ব্যভিচার ।

রীতিনীতি , কাল- মহাকাল,
আদিম যুগ , স্বর্ণ যুগ , কলি যুগের
সাধ্য নেই আমাকে পরাভূত করার,
আমার সাথে সখ্যতা গড়ে তোলার ।
আমি সুখ নামের বহুমাত্রিক অসুখকে
বুট দিয়ে পিষ্ট করে লাথি মেরে
ভারত মহাসাগরে ফেলে দেই,
আমি অশ্রুর সফেনকে বুড়ো আঙুল
দেখিয়ে সারারাত অব্দি তোমার
ফিরে আসার প্রহর গুনতে থাকি ।
আমার ধুম্রজালে ভরা খেয়ালকে
বারংবার শুশ্রূষা করি , কেবল
তোমার জন্য , সুহাসিনী রাজকন্যা ।

অনন্যোপায় এই ধরা’য় কোনোদিনই
ফুটবে না হয়ত আশার বকুল ।
তবুও সকল অনুবিধি ,অনুমত
অনুদঘাত , অনুপপত্তি আমার কাছে
নির্ভেজাল ,বেমালুম উপেক্ষিত ।
যাপিত সমাজ ব্যবস্থা , যুতসই শাস্ত্রসকল
এবং মনুষ্যরচিত সংবিধানে
তুমি বিচার্য নও লক্ষ্মীসোনা ,
প্রিয়তমা, আহ্লাদী ময়না,
তোমাকে সালাম , সালাম নিরন্তর ।

মুহাম্মাদ ইমরান
১৮ 0৯ ১৬

ছড়িয়ে দিন ইচ্ছেমত

একদিন || মুহাম্মাদ ইমরানের কবিতা || চোখ বন্ধ করে শুনতে পারেন || Poet: Muhammad Imran ||

স্বপ্নের নীলাভ চাদর
একদিন আমার
গতরেও জড়ানো ছিল ।

ঠিকমত স্বপ্ন দেখতে পারতাম না
স্বপ্ন ভেঙ্গে যাওয়ার ভয়ে ,
আলো -আঁধারের বিন্দুমাত্র
ব্যবধান আমিও টের পাইনি

আমার ছোট পৃথিবী থেকে
তাঁকে বাদ দেওয়া হলে
আমার অবশিষ্ট কিছু
থাকত কি না, ভেবে
দেখা হয়নি কখনো ?

কী ভেবে মন খারাপ করি ?
এ যে ভীষণ ভুল ,
আদালত অবমাননার শামিল ।
চরম, ভয়ংকর ঔদ্ধত্য আমার,
কী করে ভাবি, কোত্থেকে এলো
এই মহা প্রলয়ঙ্কারি দুঃসাহস !
ভাবাটাই তো অন্যায় —
সে আজ নেই ।

মুহাম্মাদ ইমরান
ঝিলটুলি, ফরিদপুর
২৬ ৬ ২০০৬

ছড়িয়ে দিন ইচ্ছেমত

আবার যদি আসি ফিরে ? মুহাম্মাদ ইমরানের কবিতা || চোখ বন্ধ করে শুনতে পারেন || Poet: Muhammad Imran ||

পড়বে আমায় মনে
কুয়াশার চাদরে ঢাকা
স্নিগ্ধ কোনো এক সকালে,
অনেক কষ্টে গাছির
পেড়ে আনা খেজুরের রস
আর হুড়ুমের মিতালীতে ।

আমার ছায়া পাবে তুমি-
শীতের প্রকম্পতায় টিকতে
না পেরে একটুখানি রোদ্দুরের
খোঁজে বেরহওয়া চুরুটে বৃদ্ধার
হাজারো নালিশ নিয়ে নিষ্পলক
আকশের দিকে তাকিয়ে থাকায় ।

আমি বারংবার ফিরে আসব-
তোমার উদাস দুপুরের
ঘর্মাক্ত ঝগড়াঝাঁটির
ভাবলেশহীন নীরস ব্যস্ততায়।

আমার হাতছানি কাঁদাবে তোমায়-
সেই যে’ যুদ্ধে যাওয়া সন্তানের মায়ের
শুকিয়ে যাওয়া অশ্রুধারার সহস্র দেনা
শোধরানোর নীরব তাড়নায় ।
,
ধরো যদি আবার আসি ফিরে
তোমার যাপিত বোবা তাড়নার
রুগ্ন চাহুনির অবুঝ ভাষাতে অথবা
মাঝ দরিয়ায় হারিয়ে যাওয়া
স্বামী কে ফিরে পাওয়া কৃষাণীর
বাঁধভাঙ্গা উল্লাসের
সুহাসিনী মুখরতা জুড়ে ।

আমায় খুঁজে পাবে তুমি-
বিকেলের অনিন্দ্যসুন্দর সবুজ মাঠে
খেলায় মগ্ন যুবকের চোখের বাটে ,
গোধূলির বিষণ্ণ বেলায় বিধ্বস্ত
প্রেমিকের অসহায় আত্মসমর্পণে – –

তোমার অস্তিত্বের নাম না জানা
সকল স্তরে ঘন ঘন নিঃশ্বাসের
পরশ বুলিয়ে দেবো ,
তোমার রক্ত-মাংস,শিরা -উপশিরা
সমগ্র সত্তাগত দায়বদ্ধতায়
নির্ঝঞ্ঝাট মিলিয়ে যাবো ।

রাত -দুপুরে ঘুমের প্রচণ্ডতায়
হারিয়ে যাওয়া কোনো এক
ষোড়শী কন্যার স্বপ্নের আবির
মাখানো রঙের মেলায়-
বেমালুম ,বেখেয়ালে পাবে তুমি আমায় ।

তুমি কী আনমনে ভড়কে যাবে
নচেৎ থমকে ?
চার বেহারার পালকি আর
কলেমার ধ্বনিতে !

সত্যিই কী ফিরে আসা সম্ভব ?
সত্যিই কী কারো চলে যাওয়া-
জ্যোৎস্নার মৃদু -স্নিগ্ধ আলোয়
পুকুরপাড়ে বসা নবদম্পতির
নয়নাভিরাম ঢলাঢলিতে
এতটুকু প্রভাব ফেলতে পারে ?
হয়তবা কোনোদিনই না
আবার হয়তবা হাঁ !
ফিরেও আসতে পারে
ফিরে আসার
নিদারুণ ব্যাকুলতায় !

মুহাম্মাদ ইমরান
ঝিলটুলি, ফরিদপুর
২৬ ৬ ২০০৬

ছড়িয়ে দিন ইচ্ছেমত

বেশ আছি || মুহাম্মাদ ইমরানের কবিতা || চোখ বন্ধ করে শুনতে পারেন || Poet: Muhammad Imran ||

এইতো আছি ভালো, বেশ !
চাওয়া –পাওয়ার নেই
কোনো হিসেব–নিকেশ ।
আকাশপানে রাতদুপুরে
খুঁজতে হয় না কোনো তারা,
ঘুমের ঘোরে স্বপ্নরা আর
ইশারায় দেয় না কোনো সাড়া ।

মাথার সিঁদুর হয়ে ছিলে যতকাল
পারিনি বুঝতে আমি সকাল আর বিকাল ।
কোথায় ছিল চিরসবুজের স্নান ,
গতরের ময়লা গতরেই ছিল
সুগন্ধি সাবানের ছিল কী কোনো দাম ?

ভাবতে হবে না আর কেউ আছে
আমার সাথে যুক্ত ,
প্রয়োজন হবে না রাখার-
তাঁর অবুঝ শত আবদার ,
আমা ভিতরের আমিরে করে দিয়েছি মুক্ত ।

শাশ্বত ,আমি মহানায়ক,
অম্লান সবুজে গাঁথা এক প্রাণ ,
অনিঃশেষ ভালোবাসায় ,নুয়েপড়া শ্রদ্ধায়
বলতে হবে না’ আর তাঁরে ‘ জান ‘ ।

মুহাম্মাদ ইমরান
১১ ১১ ১৬

ছড়িয়ে দিন ইচ্ছেমত

মা’ তফাত কিসের ? মুহাম্মাদ ইমরানের কবিতা || চোখ বন্ধ করে শুনতে পারেন || Poet: Muhammad Imran ||

মা’ কিসের তফাত ‘ ,
তোর আর দ্যাশে’
তফাত শুধু মুখের বুলি-
পাই না তো অনুভবে ।

বল, মা’ তফাত কোথায়
জন্মে না বেড়ে উঠায় ?
তোরে ডাকি মা’, তাঁরে পারি না,
সে আছে জড়ায়ে চেতনার গন্ধে
বিশ্বাসের তোপে ,মেঠোপথ খুঁড়ে,
আছে তাড়িত আবেগের সকল রন্ধ্রে ।

মা’রে’ তুই বিভাজন করিস না
তুই ডাক দেস বাজান ,
সে’ তো পারে না ।
সে আছে রক্তকণিকায় ,
লাল সবুজের পিঞ্জরায়
গহীন পরান ভরিয়া,
আছে অস্তিত্বের দ্রোহে ,
শীতল চক্ষুজুড়িয়া ।

তাঁকে ঘিরেই ছবি আঁকি ,
তাঁর মাঝেই বেড়ে উঠি ,
আশাহত হলে সে ভরসার পাল তুলে
দেয় সপ্নের চাষ , সেও যে আমার মা,
অদেখা,রঞ্জিত আবেগের অশরীরী মা।
তাঁর শুধায় শোধিত হয়েই
তোরে ডাকি মা , খবরদার
খবরদার বারণ করিস না ।

লক্ষ্মী মা’ আমার, অমন করিস না
সব বোধের বহিঃপ্রকাশ থাকে না ।
সব ভালো লাগা ব্যক্ত করা যায় না,
সব ভালোবাসা বোঝানো যায় না
সব শান্তির আদ্যোপান্ত খুঁজতে হয় না ।
সব অনুভুতির প্রকাশ সার্থক হয় না।
সব চোখের পানি নিলামে উঠে না।
সব প্রেম প্রেমজ্বরে আক্রান্ত হয় না-
সব প্রেম প্রেমবাজারে বিক্রি হয় না ।

মুহাম্মাদ ইমরান
০২ ১০ ১৬

ছড়িয়ে দিন ইচ্ছেমত

এবার  তবে মুক্তি দাও || মুহাম্মাদ ইমরানের কবিতা || চোখ বন্ধ করে শুনতে পারেন || Poet: Muhammad Imran ||

অনেক হয়েছে ,এবার মুক্তি দাও
অনেক সয়েছি ,এবার ছেড়ে দাও ।
হুম, আমি জানি আমি ভুল করেছি ,
ভুল অমানুষকে ভালোবেসে
ভুল আত্মাকে কাছে টেনে ।

না না’ আমার কোনো  আপত্তি নেই
আমার কখনো কেউ ছিল না ,
এখনো কেউ নেই ।
তোমাদের এই রঙ্গমঞ্চের
আলাদা একটা ভাষা আছে ,
তোমাদের যাপিত সমাজ ব্যবস্থার
অভিন্ন একটা রুপ আছে ।

রূপটা স্বার্থের তাগাদা পূরণের ,
হাসিমুখে অনর্গল মিথ্যা বলার
গরীবের পয়সা চুষে নেওয়ার ,
নিশিদিন ভালো মানুষের অভিনয় করার ।

তোমাদের চরিত্রের বাইরে
আরও একটি চরিত্র বিদ্যমান ,
কাম তার নাম অথবা যৌনতা-
শাড়ির মাঝে হাঁ করে তাকিয়ে থাকার
স্বতঃস্ফূর্ত প্রবণতা নচেৎ মদ্যপান ।

মানতে কোন বাধা নেই – তোমরা যোদ্ধাজাতি ,
তোমরা বীর ,বীর মুক্তিযোদ্ধা ।
জীবন্মৃত সব বাঙলা প্রাণীর হুঙ্কার-
তোমরা ১৬ কোটি বাঙ্গালীর দম্ভোক্তি ,
আত্মিক প্রশান্তি , চূড়ান্ত অহঙ্কার ।

আবার তোমরা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাও-
মাসিক ভাতা খাও ,
তাকবিরুল্লাহর সহিত
০৫ ওয়াক্ত নামাজও পড়  
কথায় কথায় ৭১ এ ফিরে যাও ।

মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও
হয়েছ তুমি আগুয়ান-
হানাদার ধ্বংস করতে
তুমি পিছপা হওনি মোটেও
অকুতভয় জাওয়ান ।
রাইফেল বইবার ক্ষত
এখনও তোমার কাঁধে অক্ষত ।

বানিয়ে বানিয়ে কী সুন্দর গল্প সাজাও
দাদীমার রূপকথার ঝুলিকেও হার মানাও ।
বাটপারও তোমার কাছে মেনেছে হার
৩০% কোটা ছাড়া কী হতো না তোমার ?
ওহে ভণ্ড , গর্বিত জানোয়ার
কোন ভূষণে সাজবে তুমি ,
কোন কাফনে বাঁধবে তুমি ,
জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, বীর কুলাঙ্গার ।

ও’ দুবাই ফেরত কম্বলওয়ালা !
দেখা হয়েছি কী কখনো-
চাঁদের নিচে লুকানো
টার্মিনালে কুচিমুচি হয়ে
শুয়েথাকা বুড়ির থর থর কাঁপন ,
দেখা হয়নি বুঝি – টুকাই আর কুকুরের
গলাগলি ধরি অভিশাপের
রাত শেষ না হওয়ার রাত্রি যাপন ।

পার্থক্য কোথায় জানতে চাই,
তাঁরা কী তোমাদের থেকে
আলাদা কিছু ভাই ।
হুম ! তাঁরাও মানুষ তবে শুধু দেখতে ,
সাহিত্যিকের ভাবনা জুড়ে ,
পাণ্ডুলিপির পৃষ্ঠা ভরে ,
কোটিপতির ০৬ তলার পরে
দৃষ্টিকটু একটি ছোট
ছোনের ঘরের তরে ।

অনেক তো হলো এবার দাও যেতে  
এত সংক্ষিপ্ত পরিসরে
কেবলই নিজ’কে নিয়ে
পড়ে থাকার কলেবরে –
কী চাও অভাগার দল খামাখা
দৃষ্টি জুড়ে তোমাদের টিআর,
রিলিফের চাল আর কাবিখা ।

তোমাদের কী অসুখ করে না , তোমরা কী মৃত্যুহীন প্রাণ ?   
রোজ হাশরের ময়দানে দাঁড়াবে না তুমি , সন্মুখ রহমান ।

মুহাম্মাদ ইমরান
১৯ ১০ ১৬

ছড়িয়ে দিন ইচ্ছেমত

ছিলে তো কোনো এক মহাপ্রয়াণে | শিমুল মুস্তাফা | মুহাম্মাদ ইমরান | Priyota | Shimul Mustapha| Muhammad Imran|

এই তো সেদিন আমাতেই ছিলে ।
ছিলে ভীষণ রকমের ‘অধুনা ব্যস্ততায়’
রাগ-গোসসায় ,লোভে-ক্ষোভে, অভিমানেও ।
ছিলে খেয়ালে- বেখেয়ালে, দস্যুতায়’
ছিলে সবুজে , সন্দেহে , আত্মিকতার দ্রোহে ,
ছিলে চোখের উঠানের বিনিদ্র রজনীর পরে
নীলাম্বরী মণিহারপুরে ,
নজরুলের ‘ প্রিয় কাজী মতিহারে’ ।

নাতিদীর্ঘ ছোঁয়ায় কেমন যেন ছিলে
অতিদূর চুম্বনেও শক্তপোক্ত ছিলে ।
ধরিত্রীর মাঝে আমি ছিলাম অবমুক্ত ধাঙড়
তোমাকে বিমুগ্ধ রাখাটাই ছিল যার
সমবেত অহঙ্কারের নোঙর ।

ছিলে আমার ঠাকরুন ,
ছিলে আমার পূজার রসদের ব্যঞ্জন ।
আমি তোমার সৌন্দর্যের পুষা কুক্কুর ছিলাম
আমি তোমার একনায়কতান্ত্রিক
ষড়যন্ত্রের মন্ত্রমুগ্ধ বানর ছিলাম ।
কী ছিলে না তুমি আমার ?
আমার দেমাক ছিলে তুমি ,
হাড় কাঁপানো শীতের মোটা কম্বল ছিলে তুমি ।

আপাতত আমি, রঙিলা রুপবান ।
আমি উন্মুক্ত , মুক্ত বিহঙ্গ, কেউ নেই আমার
আমি প্রমত্ত সাগর , চলি বহমান ।
আমার নাম এখন ‘ছুটি’
কুটিল ভূমে ঘুরেফিরি দিনমান ।

আমি এখন নিজেই একটা সুখের পুটলা’
তুমি কোথায় থাকো ,কোথায় তোমার ঘর ,
কোন বেটার বুকের দুর্গন্ধ শুঁকো,
না আবার ঘুমের ভান ধরে থাকো,  
কী করো- কী করো না,  কই আছ- কেমন আছ ‘
ওসব নিয়ে , নেই আমার কোনো জটলা ।

আমি চিৎকার করে বলতে চাই’
আমি শান্তিতে আছি ,
মহাকালের পর তথাকথিত এক ‘শান্তি’ ।
আমি চিৎকার করে বলতে চাই’
আমি স্বস্তিতে আছি,
বহু পুরাণের পর তথাকথিত এক ‘স্বস্তি’ ।

মুহাম্মাদ ইমরান
০৮ ১১ ২০১৬

ছড়িয়ে দিন ইচ্ছেমত

আমার একটা বদভ্যাস আছে || মুহাম্মাদ ইমরানের কবিতা

আমার একটা ভয়ঙ্কর বদভ্যাস আছে,
দুপুর এলেই আমি
এলিয়ে দুলিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।

কিন্তু আজ ঘুম নামক ছলনার প্রশান্তি
তার সহজাত তাণ্ডব চালাতে পারেনি,
নির্লজ্জ, বেহায়ার মতো বহুক্ষণ
আমি অবাক হয়ে বসে ছিলাম !

অনেক ক্ষমতা তোমার, না !
কী করতে পারো তুমি ?
অকর্মা, অথর্ব , হতচ্ছাড়া
কোনো বেকারকে
ভুল করে একটা ভুল স্বপ্ন
দেখাতে পেরেছ ?

সবুজ-অবুঝ, ন্যায়ের বাণে,
অন্যায়ের তোপে
তোমাকে কোথাও পাওয়া যায় না ।

সৃষ্টি, দৃষ্টি , বৃষ্টি, অনাচার, অত্যাচার,
হত্যায়, লোভে, ক্রোধে, ভুলের ভুলে,
গরিমায়, গৌরবে, ত্যাগে–
কোথায় আছ তুমি , বলো তো দেখি ?

সূর্যের আলো দেওয়া কী বন্ধ হয়ে গেছে ?
চাঁদের অল্পস্বল্প আলোর মূর্ছনায়
নবদম্পতির নয়নাভিরাম–
মাদকাসক্ত ঢলাঢলি কী থমকে গেছে ?

কই খুনোখুনি তো বন্ধ করতে পারোনি ,
এমনকি চুরুটের শেষ টানের সুখটা
পর্যন্ত রুখতে পারোনি,
শুধু পেরেছ, আমার মতো একটা
নির্ভেজাল অপদার্থর সাথে ।

মুহাম্মাদ ইমরান
১৯ ০৪ ১৬

ছড়িয়ে দিন ইচ্ছেমত