আমি কোনো সংবিধান মানি না || মুহাম্মাদ ইমরানের কবিতা || চোখ বন্ধ করে শুনতে পারেন || Poet: Muhammad Imran ||

আমার কাছে পৃথিবীর
কোনো মানে নেই,
আমার কাছে জীবনের
আলাদা কোনো ভাষা নেই ।
স্বাদ নেই ,স্বস্তি নেই , শাস্তি নেই ,
শ্রান্তি নেই , তিক্ততা নেই ,
ক্লেদ নেই , নেই কোনো প্রাপ্তি ।
সমস্ত নতি স্বীকারের মধ্যে এখনো
আমি তোমাকেই খুঁজি,
পৃথিবীর মানে বলতে এখনো
আমি তোমাকেই বুঝি ।

আমি কোনো সংবিধান মানি না,
আমি প্রেসিডেন্ট মানি না ,
আমি কোনো প্রধানমন্ত্রী মানি না ,
মন্ত্রীমশাইদের একের পর এক
বিরল প্রজাতির আশ্বাস মানি না।
সেনাবাহিনীর তাণ্ডব অথবা
অভিবাদনের নামে ফুলেল শুভেচ্ছা,
ভয়ার্ত চিৎকারে গার্ড অব অনার-
বিলকুল তাড়িত করেনা আমায় ।

রাষ্ট্রযন্ত্র বিকল করে ক্ষমতায়
বসে থাকার পশুবৃত্তি, মানি না আমি ।
মানি না ৫৪ ধারা , পুলিশি নির্যাতন ।
শক্ত বিধান এবং শক্তিশালী মানুষ –
সব মূল্যহীন , কিছুই মানি না আমি।
আমি সংসদ মানি না , সাংসদ মানি না,
ন্যায়-নীতি ,নিষ্ঠা, বিনয়াবনতা , সততার
চার পয়সার দাম নেই আমার কাছে ,
তোমার মূল্যেই কেবল ওরা আমার কাছে
মূল্যবান অথবা মূল্যহীন, প্রিয়তমা ।
,
ধুরন্ধর গোধূলির স্পষ্ট অস্পষ্টতা
আমার গতরে জ্বালা ধরাতে পারে না ।
হলুদ নদীর আদৌ সাহস নেই
আমাকে চুম্বনের,আমাকে ছোঁয়ার ।
বাঁচা – মরার ধুন্ধুমার কোনো
ভিন্নতা নেই আমার কাছে ।
আলো -আঁধারের ব্যবধান
কোথায় ,আমি বুঝি না , জানি না ।
আমি স্বপ্ন দেখি না, দেখতে পারি না।
তুমিহীন সব স্বপ্নই আমার কাছে
মিথ্যাচার , দুঃস্বপ্ন, সপ্নবিলাস,
প্রলয়ঙ্কারি পাপাচার , ব্যভিচার ।

রীতিনীতি , কাল- মহাকাল,
আদিম যুগ , স্বর্ণ যুগ , কলি যুগের
সাধ্য নেই আমাকে পরাভূত করার,
আমার সাথে সখ্যতা গড়ে তোলার ।
আমি সুখ নামের বহুমাত্রিক অসুখকে
বুট দিয়ে পিষ্ট করে লাথি মেরে
ভারত মহাসাগরে ফেলে দেই,
আমি অশ্রুর সফেনকে বুড়ো আঙুল
দেখিয়ে সারারাত অব্দি তোমার
ফিরে আসার প্রহর গুনতে থাকি ।
আমার ধুম্রজালে ভরা খেয়ালকে
বারংবার শুশ্রূষা করি , কেবল
তোমার জন্য , সুহাসিনী রাজকন্যা ।

অনন্যোপায় এই ধরা’য় কোনোদিনই
ফুটবে না হয়ত আশার বকুল ।
তবুও সকল অনুবিধি ,অনুমত
অনুদঘাত , অনুপপত্তি আমার কাছে
নির্ভেজাল ,বেমালুম উপেক্ষিত ।
যাপিত সমাজ ব্যবস্থা , যুতসই শাস্ত্রসকল
এবং মনুষ্যরচিত সংবিধানে
তুমি বিচার্য নও লক্ষ্মীসোনা ,
প্রিয়তমা, আহ্লাদী ময়না,
তোমাকে সালাম , সালাম নিরন্তর ।

মুহাম্মাদ ইমরান
১৮ 0৯ ১৬

একদিন || মুহাম্মাদ ইমরানের কবিতা || চোখ বন্ধ করে শুনতে পারেন || Poet: Muhammad Imran ||

স্বপ্নের নীলাভ চাদর
একদিন আমার
গতরেও জড়ানো ছিল ।

ঠিকমত স্বপ্ন দেখতে পারতাম না
স্বপ্ন ভেঙ্গে যাওয়ার ভয়ে ,
আলো -আঁধারের বিন্দুমাত্র
ব্যবধান আমিও টের পাইনি

আমার ছোট পৃথিবী থেকে
তাঁকে বাদ দেওয়া হলে
আমার অবশিষ্ট কিছু
থাকত কি না, ভেবে
দেখা হয়নি কখনো ?

কী ভেবে মন খারাপ করি ?
এ যে ভীষণ ভুল ,
আদালত অবমাননার শামিল ।
চরম, ভয়ংকর ঔদ্ধত্য আমার,
কী করে ভাবি, কোত্থেকে এলো
এই মহা প্রলয়ঙ্কারি দুঃসাহস !
ভাবাটাই তো অন্যায় —
সে আজ নেই ।

মুহাম্মাদ ইমরান
ঝিলটুলি, ফরিদপুর
২৬ ৬ ২০০৬

আবার যদি আসি ফিরে ? মুহাম্মাদ ইমরানের কবিতা || চোখ বন্ধ করে শুনতে পারেন || Poet: Muhammad Imran ||

পড়বে আমায় মনে
কুয়াশার চাদরে ঢাকা
স্নিগ্ধ কোনো এক সকালে,
অনেক কষ্টে গাছির
পেড়ে আনা খেজুরের রস
আর হুড়ুমের মিতালীতে ।

আমার ছায়া পাবে তুমি-
শীতের প্রকম্পতায় টিকতে
না পেরে একটুখানি রোদ্দুরের
খোঁজে বেরহওয়া চুরুটে বৃদ্ধার
হাজারো নালিশ নিয়ে নিষ্পলক
আকশের দিকে তাকিয়ে থাকায় ।

আমি বারংবার ফিরে আসব-
তোমার উদাস দুপুরের
ঘর্মাক্ত ঝগড়াঝাঁটির
ভাবলেশহীন নীরস ব্যস্ততায়।

আমার হাতছানি কাঁদাবে তোমায়-
সেই যে’ যুদ্ধে যাওয়া সন্তানের মায়ের
শুকিয়ে যাওয়া অশ্রুধারার সহস্র দেনা
শোধরানোর নীরব তাড়নায় ।
,
ধরো যদি আবার আসি ফিরে
তোমার যাপিত বোবা তাড়নার
রুগ্ন চাহুনির অবুঝ ভাষাতে অথবা
মাঝ দরিয়ায় হারিয়ে যাওয়া
স্বামী কে ফিরে পাওয়া কৃষাণীর
বাঁধভাঙ্গা উল্লাসের
সুহাসিনী মুখরতা জুড়ে ।

আমায় খুঁজে পাবে তুমি-
বিকেলের অনিন্দ্যসুন্দর সবুজ মাঠে
খেলায় মগ্ন যুবকের চোখের বাটে ,
গোধূলির বিষণ্ণ বেলায় বিধ্বস্ত
প্রেমিকের অসহায় আত্মসমর্পণে – –

তোমার অস্তিত্বের নাম না জানা
সকল স্তরে ঘন ঘন নিঃশ্বাসের
পরশ বুলিয়ে দেবো ,
তোমার রক্ত-মাংস,শিরা -উপশিরা
সমগ্র সত্তাগত দায়বদ্ধতায়
নির্ঝঞ্ঝাট মিলিয়ে যাবো ।

রাত -দুপুরে ঘুমের প্রচণ্ডতায়
হারিয়ে যাওয়া কোনো এক
ষোড়শী কন্যার স্বপ্নের আবির
মাখানো রঙের মেলায়-
বেমালুম ,বেখেয়ালে পাবে তুমি আমায় ।

তুমি কী আনমনে ভড়কে যাবে
নচেৎ থমকে ?
চার বেহারার পালকি আর
কলেমার ধ্বনিতে !

সত্যিই কী ফিরে আসা সম্ভব ?
সত্যিই কী কারো চলে যাওয়া-
জ্যোৎস্নার মৃদু -স্নিগ্ধ আলোয়
পুকুরপাড়ে বসা নবদম্পতির
নয়নাভিরাম ঢলাঢলিতে
এতটুকু প্রভাব ফেলতে পারে ?
হয়তবা কোনোদিনই না
আবার হয়তবা হাঁ !
ফিরেও আসতে পারে
ফিরে আসার
নিদারুণ ব্যাকুলতায় !

মুহাম্মাদ ইমরান
ঝিলটুলি, ফরিদপুর
২৬ ৬ ২০০৬

বেশ আছি || মুহাম্মাদ ইমরানের কবিতা || চোখ বন্ধ করে শুনতে পারেন || Poet: Muhammad Imran ||

এইতো আছি ভালো, বেশ !
চাওয়া –পাওয়ার নেই
কোনো হিসেব–নিকেশ ।
আকাশপানে রাতদুপুরে
খুঁজতে হয় না কোনো তারা,
ঘুমের ঘোরে স্বপ্নরা আর
ইশারায় দেয় না কোনো সাড়া ।

মাথার সিঁদুর হয়ে ছিলে যতকাল
পারিনি বুঝতে আমি সকাল আর বিকাল ।
কোথায় ছিল চিরসবুজের স্নান ,
গতরের ময়লা গতরেই ছিল
সুগন্ধি সাবানের ছিল কী কোনো দাম ?

ভাবতে হবে না আর কেউ আছে
আমার সাথে যুক্ত ,
প্রয়োজন হবে না রাখার-
তাঁর অবুঝ শত আবদার ,
আমা ভিতরের আমিরে করে দিয়েছি মুক্ত ।

শাশ্বত ,আমি মহানায়ক,
অম্লান সবুজে গাঁথা এক প্রাণ ,
অনিঃশেষ ভালোবাসায় ,নুয়েপড়া শ্রদ্ধায়
বলতে হবে না’ আর তাঁরে ‘ জান ‘ ।

মুহাম্মাদ ইমরান
১১ ১১ ১৬

মা’ তফাত কিসের ? মুহাম্মাদ ইমরানের কবিতা || চোখ বন্ধ করে শুনতে পারেন || Poet: Muhammad Imran ||

মা’ কিসের তফাত ‘ ,
তোর আর দ্যাশে’
তফাত শুধু মুখের বুলি-
পাই না তো অনুভবে ।

বল, মা’ তফাত কোথায়
জন্মে না বেড়ে উঠায় ?
তোরে ডাকি মা’, তাঁরে পারি না,
সে আছে জড়ায়ে চেতনার গন্ধে
বিশ্বাসের তোপে ,মেঠোপথ খুঁড়ে,
আছে তাড়িত আবেগের সকল রন্ধ্রে ।

মা’রে’ তুই বিভাজন করিস না
তুই ডাক দেস বাজান ,
সে’ তো পারে না ।
সে আছে রক্তকণিকায় ,
লাল সবুজের পিঞ্জরায়
গহীন পরান ভরিয়া,
আছে অস্তিত্বের দ্রোহে ,
শীতল চক্ষুজুড়িয়া ।

তাঁকে ঘিরেই ছবি আঁকি ,
তাঁর মাঝেই বেড়ে উঠি ,
আশাহত হলে সে ভরসার পাল তুলে
দেয় সপ্নের চাষ , সেও যে আমার মা,
অদেখা,রঞ্জিত আবেগের অশরীরী মা।
তাঁর শুধায় শোধিত হয়েই
তোরে ডাকি মা , খবরদার
খবরদার বারণ করিস না ।

লক্ষ্মী মা’ আমার, অমন করিস না
সব বোধের বহিঃপ্রকাশ থাকে না ।
সব ভালো লাগা ব্যক্ত করা যায় না,
সব ভালোবাসা বোঝানো যায় না
সব শান্তির আদ্যোপান্ত খুঁজতে হয় না ।
সব অনুভুতির প্রকাশ সার্থক হয় না।
সব চোখের পানি নিলামে উঠে না।
সব প্রেম প্রেমজ্বরে আক্রান্ত হয় না-
সব প্রেম প্রেমবাজারে বিক্রি হয় না ।

মুহাম্মাদ ইমরান
০২ ১০ ১৬

এবার  তবে মুক্তি দাও || মুহাম্মাদ ইমরানের কবিতা || চোখ বন্ধ করে শুনতে পারেন || Poet: Muhammad Imran ||

অনেক হয়েছে ,এবার মুক্তি দাও
অনেক সয়েছি ,এবার ছেড়ে দাও ।
হুম, আমি জানি আমি ভুল করেছি ,
ভুল অমানুষকে ভালোবেসে
ভুল আত্মাকে কাছে টেনে ।

না না’ আমার কোনো  আপত্তি নেই
আমার কখনো কেউ ছিল না ,
এখনো কেউ নেই ।
তোমাদের এই রঙ্গমঞ্চের
আলাদা একটা ভাষা আছে ,
তোমাদের যাপিত সমাজ ব্যবস্থার
অভিন্ন একটা রুপ আছে ।

রূপটা স্বার্থের তাগাদা পূরণের ,
হাসিমুখে অনর্গল মিথ্যা বলার
গরীবের পয়সা চুষে নেওয়ার ,
নিশিদিন ভালো মানুষের অভিনয় করার ।

তোমাদের চরিত্রের বাইরে
আরও একটি চরিত্র বিদ্যমান ,
কাম তার নাম অথবা যৌনতা-
শাড়ির মাঝে হাঁ করে তাকিয়ে থাকার
স্বতঃস্ফূর্ত প্রবণতা নচেৎ মদ্যপান ।

মানতে কোন বাধা নেই – তোমরা যোদ্ধাজাতি ,
তোমরা বীর ,বীর মুক্তিযোদ্ধা ।
জীবন্মৃত সব বাঙলা প্রাণীর হুঙ্কার-
তোমরা ১৬ কোটি বাঙ্গালীর দম্ভোক্তি ,
আত্মিক প্রশান্তি , চূড়ান্ত অহঙ্কার ।

আবার তোমরা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাও-
মাসিক ভাতা খাও ,
তাকবিরুল্লাহর সহিত
০৫ ওয়াক্ত নামাজও পড়  
কথায় কথায় ৭১ এ ফিরে যাও ।

মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও
হয়েছ তুমি আগুয়ান-
হানাদার ধ্বংস করতে
তুমি পিছপা হওনি মোটেও
অকুতভয় জাওয়ান ।
রাইফেল বইবার ক্ষত
এখনও তোমার কাঁধে অক্ষত ।

বানিয়ে বানিয়ে কী সুন্দর গল্প সাজাও
দাদীমার রূপকথার ঝুলিকেও হার মানাও ।
বাটপারও তোমার কাছে মেনেছে হার
৩০% কোটা ছাড়া কী হতো না তোমার ?
ওহে ভণ্ড , গর্বিত জানোয়ার
কোন ভূষণে সাজবে তুমি ,
কোন কাফনে বাঁধবে তুমি ,
জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, বীর কুলাঙ্গার ।

ও’ দুবাই ফেরত কম্বলওয়ালা !
দেখা হয়েছি কী কখনো-
চাঁদের নিচে লুকানো
টার্মিনালে কুচিমুচি হয়ে
শুয়েথাকা বুড়ির থর থর কাঁপন ,
দেখা হয়নি বুঝি – টুকাই আর কুকুরের
গলাগলি ধরি অভিশাপের
রাত শেষ না হওয়ার রাত্রি যাপন ।

পার্থক্য কোথায় জানতে চাই,
তাঁরা কী তোমাদের থেকে
আলাদা কিছু ভাই ।
হুম ! তাঁরাও মানুষ তবে শুধু দেখতে ,
সাহিত্যিকের ভাবনা জুড়ে ,
পাণ্ডুলিপির পৃষ্ঠা ভরে ,
কোটিপতির ০৬ তলার পরে
দৃষ্টিকটু একটি ছোট
ছোনের ঘরের তরে ।

অনেক তো হলো এবার দাও যেতে  
এত সংক্ষিপ্ত পরিসরে
কেবলই নিজ’কে নিয়ে
পড়ে থাকার কলেবরে –
কী চাও অভাগার দল খামাখা
দৃষ্টি জুড়ে তোমাদের টিআর,
রিলিফের চাল আর কাবিখা ।

তোমাদের কী অসুখ করে না , তোমরা কী মৃত্যুহীন প্রাণ ?   
রোজ হাশরের ময়দানে দাঁড়াবে না তুমি , সন্মুখ রহমান ।

মুহাম্মাদ ইমরান
১৯ ১০ ১৬

ছিলে তো কোনো এক মহাপ্রয়াণে | শিমুল মুস্তাফা | মুহাম্মাদ ইমরান | Priyota | Shimul Mustapha| Muhammad Imran|

এই তো সেদিন আমাতেই ছিলে ।
ছিলে ভীষণ রকমের ‘অধুনা ব্যস্ততায়’
রাগ-গোসসায় ,লোভে-ক্ষোভে, অভিমানেও ।
ছিলে খেয়ালে- বেখেয়ালে, দস্যুতায়’
ছিলে সবুজে , সন্দেহে , আত্মিকতার দ্রোহে ,
ছিলে চোখের উঠানের বিনিদ্র রজনীর পরে
নীলাম্বরী মণিহারপুরে ,
নজরুলের ‘ প্রিয় কাজী মতিহারে’ ।

নাতিদীর্ঘ ছোঁয়ায় কেমন যেন ছিলে
অতিদূর চুম্বনেও শক্তপোক্ত ছিলে ।
ধরিত্রীর মাঝে আমি ছিলাম অবমুক্ত ধাঙড়
তোমাকে বিমুগ্ধ রাখাটাই ছিল যার
সমবেত অহঙ্কারের নোঙর ।

ছিলে আমার ঠাকরুন ,
ছিলে আমার পূজার রসদের ব্যঞ্জন ।
আমি তোমার সৌন্দর্যের পুষা কুক্কুর ছিলাম
আমি তোমার একনায়কতান্ত্রিক
ষড়যন্ত্রের মন্ত্রমুগ্ধ বানর ছিলাম ।
কী ছিলে না তুমি আমার ?
আমার দেমাক ছিলে তুমি ,
হাড় কাঁপানো শীতের মোটা কম্বল ছিলে তুমি ।

আপাতত আমি, রঙিলা রুপবান ।
আমি উন্মুক্ত , মুক্ত বিহঙ্গ, কেউ নেই আমার
আমি প্রমত্ত সাগর , চলি বহমান ।
আমার নাম এখন ‘ছুটি’
কুটিল ভূমে ঘুরেফিরি দিনমান ।

আমি এখন নিজেই একটা সুখের পুটলা’
তুমি কোথায় থাকো ,কোথায় তোমার ঘর ,
কোন বেটার বুকের দুর্গন্ধ শুঁকো,
না আবার ঘুমের ভান ধরে থাকো,  
কী করো- কী করো না,  কই আছ- কেমন আছ ‘
ওসব নিয়ে , নেই আমার কোনো জটলা ।

আমি চিৎকার করে বলতে চাই’
আমি শান্তিতে আছি ,
মহাকালের পর তথাকথিত এক ‘শান্তি’ ।
আমি চিৎকার করে বলতে চাই’
আমি স্বস্তিতে আছি,
বহু পুরাণের পর তথাকথিত এক ‘স্বস্তি’ ।

মুহাম্মাদ ইমরান
০৮ ১১ ২০১৬

আমার একটা বদভ্যাস আছে || মুহাম্মাদ ইমরানের কবিতা

আমার একটা ভয়ঙ্কর বদভ্যাস আছে,
দুপুর এলেই আমি
এলিয়ে দুলিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।

কিন্তু আজ ঘুম নামক ছলনার প্রশান্তি
তার সহজাত তাণ্ডব চালাতে পারেনি,
নির্লজ্জ, বেহায়ার মতো বহুক্ষণ
আমি অবাক হয়ে বসে ছিলাম !

অনেক ক্ষমতা তোমার, না !
কী করতে পারো তুমি ?
অকর্মা, অথর্ব , হতচ্ছাড়া
কোনো বেকারকে
ভুল করে একটা ভুল স্বপ্ন
দেখাতে পেরেছ ?

সবুজ-অবুঝ, ন্যায়ের বাণে,
অন্যায়ের তোপে
তোমাকে কোথাও পাওয়া যায় না ।

সৃষ্টি, দৃষ্টি , বৃষ্টি, অনাচার, অত্যাচার,
হত্যায়, লোভে, ক্রোধে, ভুলের ভুলে,
গরিমায়, গৌরবে, ত্যাগে–
কোথায় আছ তুমি , বলো তো দেখি ?

সূর্যের আলো দেওয়া কী বন্ধ হয়ে গেছে ?
চাঁদের অল্পস্বল্প আলোর মূর্ছনায়
নবদম্পতির নয়নাভিরাম–
মাদকাসক্ত ঢলাঢলি কী থমকে গেছে ?

কই খুনোখুনি তো বন্ধ করতে পারোনি ,
এমনকি চুরুটের শেষ টানের সুখটা
পর্যন্ত রুখতে পারোনি,
শুধু পেরেছ, আমার মতো একটা
নির্ভেজাল অপদার্থর সাথে ।

মুহাম্মাদ ইমরান
১৯ ০৪ ১৬

ফিরে এসো নন্দিনী কবিতা | কবি মুহাম্মাদ ইমরান | A Sad Poem | Poet Muhammad Imran

শ্রাবণের কান্নাভেজা রাতে
চৌত্রের খরতাপে মিশে’
গোধূলির বিষণ্ণ বেলায়’ ফিরে এসো
ফিরে এসো শরতের এক স্নিগ্ধ সকালে
আয় ফিরে আয় ‘বসন্ত’ আর একটিবার
দাও দাও দাও মরণের অধিকার ।

কাকডাকা ভোরে
নয় তো ঘোর তিমিরে
উদাস দুপুরে ফিরে আসো
ফিরে এসো সন্তানহারা মায়ের
চোখের জলে বেয়ে ।

আমি রাখতে পারিনি তোমার মান
লক্ষ্মী তুমি করো না অভিমান ।
আসবে তুমি আসবে
সত্যি আবার ফিরে
চার বেহারার পালকি
আর কলেমার ধ্বনিতে ।

শুধু একটা মানবীর জন্য || মুহাম্মদ ইমরানের কবিতা

আমি জানতে চাই
আমাকে আর কী করতে হবে ?
কী করলে আমার মুক্তি মিলবে
আমার স্বাভাবিক প্রায়শ্চিত্ত’ জুটবে
আমি জানতে চাই ?

একটাই তো মানবী অথচ কত শ্রম ?
কখন ও চৌত্রের খরতাপে পুড়তে পুড়তে
অঙ্গার হয়ে গিয়েছি,
কখনো বৃষ্টি অথবা শিলাবৃষ্টি হয়ে
তামাম দুনিয়াকে ভিজিয়ে দিয়েছি
অথচ পারলাম না’ আমি ভিজতে !

এখনও নষ্ট দুপুরে আঁতকে উঠি
লাজুক বিকেলকে নির্লজ্জর মতো
এড়িয়ে যাই, গভীর রজনীতে
নিজেকে নিজে, সান্ত্বনা দিতে দিতে
সান্ত্বনা শব্দটার প্রতি ঘেন্না ধরিয়ে দেই ।

কী না করেছি আমি !
হুজুরের বশীকরণ তাবিজ
কবরের পর কবর পুঁতে যেতাম;
কালো কুকুর, মরা ঘাট, আম গাছ,
ডালিম গাছ, শুকুর ফকির থেকে শুরু করে
মৌলভিডাঙ্গার পীর সাব
কার কাছে যাইনি আমি ?

একজন সাধারণ মানুষের মতো বেঁচে
থাকার আকুতি নিশ্চয়ই
অসাধারণ কিছু নয় ?
সেই সাধারণের সুখানুভূতির সত্তাটুকুন
কতটা মূল্যে খরিদযোগ্য,
আমি জানতে চাই ?

আমি স্নিগ্ধ ভোর পরখ করতে চাই
রোদেলা দুপুরে অবসাদে ভরা
একখানা ঘর্মাক্ত ঘুম চাই।
গোধূলির বিষণ্ণতা
চড়া দামে কিনতে চাই ।

হেঁয়ালি বিকালে বেখেয়ালে
হারিয়ে যেতে চাই ঐ দূর দিগন্তে।
রঙধনুর লীলা দেখে চিৎকার করতে চাই
রাত ১০ টা হলেই সুবোধ বালকের মতো
তন্দ্রার ঘোরে হারিয়ে যেতে চাই ।

খুব সাধারণ হয়ে বেঁচে থাকার জন্য
আমাকে কী কী জলাঞ্জলি দিতে হবে
বিনয়াবনতার সাথে আমি জানতে চাই ?

ধ্বস্ত, জীর্ণ, নষ্ট, পচা, গলা
একটাই তো মানবী অথচ
আমি কত রুগ্ন, কত অসহায় !

মুহাম্মাদ ইমরান
১৬ ০৭ ২০১৬