বড় সাধ ছিল | মুহাম্মাদ ইমরানের কবিতা | Boro Sadh Chilo | Muhammad Imran |

বড় সাধ ছিল তোমার স্পর্শে
জীবনের মানে বোঝার;
সাধ ছিল তোমার কবুল বলার ভঙ্গিটা দেখার ।

সাধ ছিল চাঁদকে সাথে নিয়ে
সারারাত ডিঙ্গি নৌকায় ঘুরে ফেরার,
জ্যোৎস্নার আলোকে জিম্মি করে
মুদ্রাহীন ছন্দের তালে তালে ঢলাঢলি করার ।

সাধ ছিল পুরোদস্তুর স্বপ্নাতুর বনে যাবার
অধরা স্বপ্নের খুব কাছাকাছি চলে যাবার ।
সাধ ছিল ভালোবাসাকে চেটেপুটে খাওয়ার,
আকস্মিক চুম্বনে
তোমার ঘর্মাক্ত লালা শুষে নেওয়ার ।

সাধ ছিল একটি সন্তান, কন্যা সন্তান;
দেখতে তোমার মতো
হবে, আমার অনুভূতির মাস্তান ।
সাধ ছিল তোমার মুখ থেকে ঘন ঘন
‘এই শুনছো’ শুনার।

উচ্চাভিলাষী বিরামহীন ঝগড়া শেষে
দুজন দু’কাত হয়ে ঘুমের ভান করে
সারানিশি চোখ বড় করে চেয়ে থাকার ।

একটি দোতলা বাড়ি, একটি ছোট সংসার
দুজন মিলে একটি জীবন, আবহ চমৎকার ।
বড় সাধ ছিল শিশুতোষ ভালোবাসায়
তোমাকে আগলে রাখার,
নিজেকে নিঃশেষ করে দিয়ে
তোমাকে নির্মাণ করার।


১৭ ১০ ১৬

এবার  তবে মুক্তি দাও | মুহাম্মাদ ইমরানের কবিতা | Ebar Tobe Mukti Dao | Muhammad Imran |

অনেক হয়েছে। এবার মুক্তি দাও।
অনেক সয়েছি। এবার ছেড়ে দাও ।
হুম, আমি জানি আমি ভুল করেছি।
ভুল অমানুষকে ভালোবেসে
ভুল আত্মাকে কাছে টেনে ।

না না’ আমার কোনো  আপত্তি নেই।
আমার কখনো কেউ ছিল না
এখনো কেউ নেই ।
তোমাদের এই রঙ্গমঞ্চের
আলাদা একটা ভাষা আছে
তোমাদের যাপিত সমাজ ব্যবস্থার
অভিন্ন একটা রূপ আছে ।

রূপটা স্বার্থের তাগাদা পূরণের
হাসিমুখে অনর্গল মিথ্যা বলার
গরীবের পয়সা চুষে নেওয়ার
নিশিদিন ভালো মানুষের অভিনয় করার ।

তোমাদের চরিত্রের বাইরে
আরও একটি চরিত্র বিদ্যমান;
কাম তার নাম অথবা যৌনতা
শাড়ির মাঝে হাঁ করে তাকিয়ে থাকার
স্বতঃস্ফূর্ত প্রবণতা নচেৎ মদ্যপান ।

মানতে কোন বাধা নেই, তোমরা যোদ্ধাজাতি
তোমরা বীর, বীর মুক্তিযোদ্ধা ।
জীবন্মৃত সব বাঙলা প্রাণীর হুঙ্কার
তোমরা ১৬ কোটি বাঙালির দম্ভোক্তি
আত্মিক প্রশান্তি, চূড়ান্ত অহঙ্কার ।

আবার তোমরা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাও
মাসিক ভাতা খাও
তাকবিরুল্লাহর সহিত
০৫ ওয়াক্ত নামাজও পড়ো  
কথায় কথায় ৭১ এ ফিরে যাও ।

মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও
হয়েছ তুমি আগুয়ান
হানাদার ধ্বংস করতে
তুমি পিছপা হওনি মোটেও
অকুতভয় জাওয়ান ।
রাইফেল বইবার ক্ষত
এখনও তোমার কাঁধে অক্ষত ।

বানিয়ে বানিয়ে কী সুন্দর গল্প সাজাও
দাদীমার রূপকথার ঝুলিকেও হার মানাও ।
বাটপারও তোমার কাছে মেনেছে হার
৩০% কোটা ছাড়া কী হতো না তোমার ?
ওহে ভণ্ড, গর্বিত জানোয়ার
কোন ভূষণে সাজবে তুমি
কোন কাফনে বাঁধবে তুমি
জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, বীর কুলাঙ্গার ।

ও’ দুবাই ফেরত কম্বলওয়ালা !
দেখা হয়েছি কী কখনো
চাঁদের নিচে লুকানো
টার্মিনালে কুচিমুচি হয়ে
শুয়ে থাকা বুড়ির’ থর থর কাঁপন
দেখা হয়নি বুঝি, টুকাই আর কুকুরের
গলাগলি ধরি, অভিশাপের
রাত শেষ না হওয়ার রাত্রি যাপন ।

পার্থক্য কোথায় জানতে চাই
তাঁরা কী তোমাদের থেকে
আলাদা কিছু ভাই ।
হুম ! তাঁরাও মানুষ তবে শুধু দেখতে
সাহিত্যিকের ভাবনা জুড়ে
পাণ্ডুলিপির পৃষ্ঠা ভরে
কোটিপতির ০৬ তলার পরে
দৃষ্টিকটু একটি ছোট
ছোনের ঘরের তরে ।

অনেক তো হলো এবার দাও যেতে  
এত সংক্ষিপ্ত পরিসরে
কেবলই নিজকে নিয়ে
পড়ে থাকার কলেবরে
কী চাও অভাগার দল খামাখা
দৃষ্টি জুড়ে তোমাদের টিআর,
রিলিফের চাল আর কাবিখা ।

তোমাদের কী অসুখ করে না, তোমরা কী মৃত্যুহীন প্রাণ ?   
রোজ হাশরের ময়দানে দাঁড়াবে না তুমি, সন্মুখ রহমান ?


১৯ ১০ ১৬

ছিলে তো কোনো এক মহাপ্রয়াণে | মুহাম্মাদ ইমরানের কবিতা | Cile To Kono Ek Mohaproyane | Muhammad Imran |

এই তো সেদিন আমাতেই ছিলে ।
ছিলে ভীষণ রকমের অধুনা ব্যস্ততায়
রাগ-গোসসায়, লোভে-ক্ষোভে, অভিমানেও ।

ছিলে খেয়ালে, বেখেয়ালে, দস্যুতায়
ছিলে সবুজে, সন্দেহে, আত্মিকতার দ্রোহে,
ছিলে চোখের উঠানের বিনিদ্র রজনীর পরে
নীলাম্বরী মণিহারপুরে
নজরুলের প্রিয় কাজী মতিহারে ।

নাতিদীর্ঘ ছোঁয়ায় কেমন যেন ছিলে
অতিদূর চুম্বনেও শক্তপোক্ত ছিলে ।
ধরিত্রীর মাঝে আমি ছিলাম অবমুক্ত ধাঙড়
তোমাকে বিমুগ্ধ রাখাটাই ছিল যার
সমবেত অহংকারের নোঙর ।

ছিলে আমার ঠাকরুন
ছিলে আমার পূজার রসদের ব্যঞ্জন ।
আমি তোমার সৌন্দর্যের পোষা কুকুর ছিলাম
আমি তোমার একনায়কতান্ত্রিক ষড়যন্ত্রের
মন্ত্রমুগ্ধ বানর ছিলাম ।
কী ছিলে না তুমি আমার ?
আমার দেমাগ ছিলে তুমি
হাড় কাঁপানো শীতের’
মোটা কম্বল ছিলে তুমি ।

আপাতত আমি, রঙিলা রূপবান।
আমি উন্মুক্ত, মুক্ত বিহঙ্গ, কেউ নেই আমার
আমি প্রমত্ত সাগর, চলি বহমান ।
আমার নাম এখন ‘ছুটি’
কুটিল ভূমে ঘুরেফিরি দিনমান ।

আমি এখন নিজেই একটা সুখের পুটলা
তুমি কোথায় থাকো, কোথায় তোমার ঘর
কোন বেটার বুকের দুর্গন্ধ শুঁকো
না আবার ঘুমের ভান ধরে থাকো
কী করো, কী করো না, কই আছ, কেমন আছ
ওসব নিয়ে, নেই আমার কোনো জটলা ।

আমি চিৎকার করে বলতে চাই
আমি শান্তিতে আছি ।
মহাকালের পর তথাকথিত এক ‘শান্তি’ ।
আমি চিৎকার করে বলতে চাই
আমি স্বস্তিতে আছি
বহু পুরাণের পর তথাকথিত এক ‘স্বস্তি’ ।


০৮ ১১ ২০১৬

শুধু একটা মানবীর জন্য | মুহাম্মদ ইমরানের কবিতা | shudhu Ekta Manobir Jonno | Muhammad Imran

আমি জানতে চাই
আমাকে আর কী করতে হবে ?
কী করলে আমার মুক্তি মিলবে
আমার স্বাভাবিক প্রায়শ্চিত্ত জুটবে
আমি জানতে চাই ?

একটাই তো মানবী অথচ কত শ্রম !
কখনও চৌত্রের খরতাপে পুড়তে পুড়তে
অঙ্গার হয়ে গিয়েছি ।
কখনো বৃষ্টি অথবা শিলাবৃষ্টি হয়ে
তামাম দুনিয়াকে ভিজিয়ে দিয়েছি
অথচ পারলাম না আমি ভিজতে !

এখনও নষ্ট দুপুরে আঁতকে উঠি
লাজুক বিকেলকে নির্লজ্জর মতো
এড়িয়ে যাই, গভীর রজনীতে
নিজেকে নিজে, সান্ত্বনা দিতে দিতে
সান্ত্বনা শব্দটার প্রতি ঘেন্না ধরিয়ে দেই ।

কী না করেছি আমি !
হুজুরের বশীকরণ তাবিজ
কবরের পর কবর পুঁতে যেতাম;
কালো কুকুর, মরা ঘাট, আম গাছ,
ডালিম গাছ, শুকুর ফকির থেকে শুরু করে
মৌলভিডাঙ্গার পীর সাব’
কার কাছে যাইনি আমি ?

একজন সাধারণ মানুষের মতো বেঁচে
থাকার আকুতি নিশ্চয়ই
অসাধারণ কিছু নয় ?
সেই সাধারণের সুখানুভূতির সত্তাটুকুন
কতটা মূল্যে খরিদযোগ্য
আমি জানতে চাই ?

আমি স্নিগ্ধ ভোর পরখ করতে চাই
রোদেলা দুপুরে অবসাদে ভরা
একখানা ঘর্মাক্ত ঘুম চাই।
গোধূলির বিষণ্ণতা
চড়া দামে কিনতে চাই ।

হেঁয়ালি বিকালে বেখেয়ালে
হারিয়ে যেতে চাই ঐ দূর দিগন্তে।
রঙধনুর লীলা দেখে চিৎকার করতে চাই
রাত ১০ টা হলেই সুবোধ বালকের মতো
তন্দ্রার ঘোরে হারিয়ে যেতে চাই ।

খুব সাধারণ হয়ে বেঁচে থাকার জন্য
আমাকে কী কী জলাঞ্জলি দিতে হবে
বিনয়াবনতার সাথে আমি জানতে চাই ?

ধ্বস্ত, জীর্ণ, নষ্ট, পচা, গলা
একটাই তো মানবী অথচ
আমি কত রুগ্ন, কত অসহায় !


১৬ ০৭ ২০১৬

জান | মুহাম্মাদ ইমরানের কবিতা | Jan | Muhammad Imran |

কাল আচমকাই মধ্যরাতে তুঁই হানা দিলি
তোর মিষ্টি গন্ধটা অনুভব করছিলাম
কেমন যেন তোঁর নিঃশ্বাসের ফিসফিসানি
আমার পুরো কলিজাটা জুড়ে বয়ে বেড়াচ্ছিল ।

শুনলাম তুঁই সুখে আছোস।
তোঁর সুখে থাকাটা আমার স্পন্দন
সচল রাখার জন্য কতটা জরুরি
তা তুঁই ভালো করেই জানোস !

আমার জন্য ভাবিস না
তোঁর নিঃশ্বাসের গন্ধটা
আমি আমার বিশ্বাসের মধ্যে
অনেক শক্ত করে পুঁতে রেখেছি
আশা করি,
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভালোই থাকবো ?


তোঁর জান